জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে জামিন স্থগিত হওয়ায় আইনজীবীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কেন জামিন স্থগিত হয়েছে, তা তিনি আইনজীবীদের কাছে জানতে চান। হাইকোর্ট জামিন দেওয়ার পরও আপিল বিভাগ স্থগিত করার ক্ষেত্রে আইনজীবীদের কোনো ত্রুটি ছিল কি না, তাও জানতে চান তিনি। তবে আইনজীবীরা নিজেদের ত্রুটি থাকার কথা অস্বীকার করে পুরো দায় সরকারের ওপর চাপিয়েছেন। একই সঙ্গে খালেদা জিয়াকে আশ্বাস দিয়েছেন যে তাড়াতাড়িই তিনি কারামুক্ত হবেন। গত ২৫ মার্চ বিকেলে ছয়জন আইনজীবী কারাগারে গিয়ে সাক্ষাৎ করলে জামিন স্থগিত হওয়া নিয়ে খালেদা জিয়া তাঁদের প্রশ্ন করেন। সেই সঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে আপাতত দলের কাজে বেশি মনোযোগ দিতে পরামর্শ দেন দলীয় প্রধান। গতকাল মঙ্গলবার বিএনপিপন্থী কয়েকজন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
খালেদা জিয়া তাঁর মামলা থেকে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে বিরত থাকতে বলেছেন—গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশিত হওয়ার পর তোলপাড় চলছে বিএনপির ভেতরে। দলের কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে কৌতূহল। গত রাতে গুলশান বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ নিয়ে বৈঠক করেছেন দলের সিনিয়র নেতারা।
এর আগে খালেদা জিয়ার জামিন না হলে নির্বাচনে যাওয়া না-যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়। তাঁর অনুপস্থিতিতে দলে ভাঙন তৈরি হতে পারে বলেও গুঞ্জন শুরু হয় দলটির মধ্যে।
বিএনপিপন্থী সংশ্লিষ্ট আইনজীবী সূত্রে জানা যায়, কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনাকালে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র এক আইনজীবী দলের বিভিন্ন পর্যায়ের আইনজীবীদের নিয়ে কথা বলতে থাকেন। এতে অনেকটা বিরক্ত হন খালেদা জিয়া। ওই জুনিয়র আইনজীবীই অন্যদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে মওদুদ সম্পর্কে সর্বশেষ তথ্য তুলে ধরেন। আলোচনার এক পর্যায়ে মওদুদ আহমদকে আপাতত দলীয় কর্মকাণ্ডে বেশি মনোযোগী হতে বলেন বিএনপিপ্রধান।
এ বিষয়ে আরেক আইনজীবী নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বেগম জিয়া এমন নির্দেশনা কেন দিলেন তা জানি না। তবে এটুকু বলতে পারি, এত বড় কথা উনি (বেগম জিয়া) না বললে তো আসা সম্ভব নয়। এটাও সত্য, মওদুদ আহমদকে নিয়ে এখন সন্দেহ করার কিছু নেই। তিনি বেগম জিয়ার ওপর শতভাগ আস্থা রেখে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। আমি অন্ততপক্ষে তাঁকে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলে মনে করি না। পুরো বিষয়টিই পরিষ্কার হয়ে যাবে। মওদুদ যদি আগের মতোই কর্মকাণ্ড চালিয়ে যান তাহলে বুঝবেন এসব কিছুই না। আর যদি নিজেকে গুটিয়ে নেন তাহলে পরিষ্কার হয়ে যাবে, ম্যাডামের পক্ষ থেকে তাঁর মামলা পরিচালনা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।’
এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, “মূলত ম্যাডামের মামলার বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। বিভিন্ন মামলা নিয়ে কী করা হচ্ছে, তা ম্যাডাম জানতে চান।
একপর্যায়ে জামিন স্থগিত করা নিয়েও কথা বলেন ম্যাডাম। তিনি (খালেদা জিয়া) বলেন যে ‘হাইকোর্ট জামিন দিলেন। তার পরও কী কারণে আপিল বিভাগ স্থগিত করলেন?’ তিনি আরো বলেন যে ‘আমি তো (খালেদা) কোনো দুর্নীতি করিনি।’ জবাবে আমরা আইনগত প্রক্রিয়ার বিষয়টি ম্যাডামকে জানিয়েছি। ম্যাডাম আমাদের পদক্ষেপে সন্তুষ্ট। এর বাইরে বার নির্বাচন নিয়েও কথা হয়েছে।”
খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. জয়নুল আবেদীন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা ছয়জন কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে জয়লাভের পর মূলত আমি ও সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন গিয়েছিলাম। সেখানে আরো চারজন সিনিয়র আইনজীবী যান। ম্যাডাম আমাদের অভিনন্দিত করেছেন। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে দেখতে না পেয়ে ম্যাডাম জানতে চান যে কেন উনি এলেন না। আমরা ম্যাডামকে বলেছি যে তাঁর অন্য একটি প্রগ্রাম রয়েছে।’ জয়নুল আরো বলেন, ‘ম্যাডাম আমাদের সবাইকে সমন্বয় করে চলতে বলেছেন।’
Post Views:
৪৩৯